নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে
নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে অর্থাৎ একজন বাংলাদেশী নাগরিকের জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি নতুন এনআইডি কার্ড করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে দুই ভাবে NID Card আবেদন করা যায়। ১. ভোটার হালনাগাতের সময়, ২. অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে। ভোটার হালনাগাত অথবা অনলাইনে যেভাবেই আবেদন করেন না কেনো, আইডি কার্ড করতে যে সব ডকুমেন্টস প্রয়োজন তা জমা দিতেই হবে।
নতুন ভোটার হতে যা যা লাগে
নতুন ভোটার হতে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, JSC/SSC/HSC পরিক্ষার সনদ, পিতা মাতার আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন। বর্তমান ঠিকানা যাচাই করার জন্য ইউটিলিটি বিলের কপি যেমন গ্যাস, পানি অথবা বিদ্যুৎ বিলের কাগজ জমা দিতে হয়। স্থায়ী ঠিকানা প্রমানে জমি জমার টেক্স / কর পরিশোধের রশিদ প্রয়োজন।
আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্রে রক্তের গ্রুপ উল্লেখ থাকে তাই সেটি যুক্ত করার জন্য ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার রিপোর্ট (ক্লিনিক / হাসপাতাল হতে) জমা দেয়া লাগে। যেকোন সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে আপনার রক্তের গ্রুপ টেস্ট করিয়ে সেই রিপোর্ট সংযুক্ত করুন।
Documents For NID Application
এনআইডি কার্ড করতে কি কি লাগে তার একটি লিস্ট নিচে দেয়া হল-
- জন্ম নিবন্ধন সনদ (ডিজিটাল)
- বোর্ড পরিক্ষার সার্টিফিকেট অথবা রেজিস্ট্রেশন পেপার
- সচল মোবাইল নাম্বার
- নাগরিক সনদ (চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট)
- পিতা মাতার আইডি কার্ড
- ইউটিলিটি বিলের কপি
- জমির খাজনা / কর পরিশোধের রশিদ
কেউ যদি তুলনামূলক বেশি বয়সে নতুন এনআইডি কার্ড করতে চায় তাহলে তাকে পূর্বে কখনো জাতীয় পরিচয় পত্রের নিবন্ধন করেনি এই মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হয়। আবেদন সাথে সংযুক্ত কাগজপত্র সত্যায়িত করলে সব থেকে ভালো হয়। তা না হলে ডকুমেন্টস গুলোর মেইন কপি সাথে নিবেন যাতে প্রয়োজন হলে অরিজিনাল কপি দেখতে পারে।
আবেদনকারী বিবাহিত হলে আবেদনের সাথে অতিরিক্ত কাগজ হিসেবে কাবিননামা অর্থাৎ বৈবাহিক সনদ যুক্ত করতে হবে। আইডি কার্ডে স্বামীর নাম যুক্ত করতে স্বামীর NID Card এর ফটোকপি জমা দিতে হয়। তবে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ আইডি কার্ডে পিতার নামের পরিবর্তে স্বামীর নাম বসানো উচিত নয়।
নতুন ভোটার হবার শর্ত
বর্তমানে বয়স ১৬ হলেই অনলাইনে নতুন ভোটার আবেদন করতে পারে এবং জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবে। যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে তখন তার নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত হবে এবং ভোট দেয়ার জন্য বিবেচিত হবে।
নতুন ভোটার আবেদন করার কিছু শর্ত রয়েছে, যারা এসব শর্তে উপনিত হবে তারা আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবে। নতুন ভোটার হওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত টিউটোরিয়াল রয়েছে। এখনে শুধু কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হলো-
- বাংলাদেশি নাগরিক হতে হবে
- ১৮ বছর বা তার চেয়া বেশি
বাংলাদেশ দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে। তার মানে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত, যারা অন্য দেশের নাগরিক তারা দ্বৈত জাতীয়তার জন্য আবেদন করতে পারেন।
নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে
নতুন এন আইডি কার্ড করতে আবেদনের সাথে কিছু প্রমান পত্র অর্থাৎ ডকুমেন্টস আবশ্যিকভাবে জমা দিতে হয়। আর কিছু কাগজপত্র অপশনাল যা ক্ষেত্র বিশেষ প্রয়োজন হতে পারে। আবেদনের সাথে অবশ্যই জমা দিতে হয় এমন কিছু ডকুমেন্টস হলো জন্ম নিবন্ধন, শিক্ষা সনদ, পিতা-মাতার আইডি কার্ড ও ইউটিলিটি বিলের কপি।
বিবাহিত হলে কাবিনের কাগজ, রক্তের গুপ এডড করতে টেস্টের রিপোর্ট এসব প্রয়োজন হলে যুক্ত করতে পারেন। আইডি কার্ডে স্বামীর নাম যুক্ত করতে স্বামীর আইডি কার্ড প্রয়োজন হবে। তবে নির্বাচন কমিশন অফিসের চাহিদা অনুসারে অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে।
#১. জন্ম নিবন্ধন সনদ
ভোটার হতে হলে আপনার একটি জন্ম নিবন্ধন থাকা লাগবে। জন্ম নিবন্ধন সনদ অবশ্যই অনলাইনে থাকতে হবে যাকে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ বলা হয়। অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সাধারণত ১৭ ডিজিটের হয়ে থাকে। বর্তমানে হাতের লেখা জন্ম নিবন্ধন কিংবা অনলাইন করা নেই এমন সনদ গ্রহন করা হয় না।
জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করার জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ একটি বাধ্যতামূলক ডকুমেন্টস। এটি ছাড়া আবেদন জমাই নেবে না। তাই আপনার জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা আছে কিনা সেটি ভোটার আবেদন করার আগেই জেনে নিন।শিক্কা
#২. বোর্ড পরিক্ষার সার্টিফিকেট
National ID Card এর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশা হিসেবে ছাত্র/ছাত্রী ব্যবহার করতে শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ প্রয়োজন হয়। যেকোন বোর্ড পরিক্ষার সার্টিফিকেট যেমন JSC, SSC, HSC অথবা এর সমমান পরিক্ষার সার্টিফিকেট শিক্ষা সনদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
আবেদনকারী পড়াশোনা না করে থাকলে শিক্ষা সনদের বিপরিতে প্রত্যয়ন পত্র যুক্ত করতে পারেন। শিক্ষিত না হলে শিক্ষা সনদ না দিলেও সমস্যা নেই।
#৩. পিতা মাতার আইডি কার্ড
প্রত্যেকের NID Card এ পিতা মাতার তথ্য থাকে। আইডি কার্ডের প্রথম পেজেই বাবা এবং মায়ের নাম লেখা থাকে তাই পিতা মাতার তথ্য যাচাই করতে এবং ব্যক্তির জাতীয়তা নিশ্চিত করতে বাবা-মার এনআইডি কার্ড প্রয়োজন। তাছাড়া আবেদনকারীর পিতা-মাতার জাতীয়তা এবং তার নিজে বাংলাদেশী প্রমানেও পিতা মাতার আইডি কার্ড গুরুত্বপূর্ণ প্রমান হিসেবে কাজ করে।
নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদনের জন্য যে সব কাগজপত্র আবশ্যিক ভাবে জমা দিতে হয় তার মধ্যে পিতা মাতার আইডি কার্ড অন্যতম। ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের পর যেটির প্রাধান্য বেশি সেটি হচ্ছে পিতা মাতার National Identity Card.
#৪. মোবাইল নাম্বার
ভোটার হওয়ার আবেদন করার সময় একটি সচল মোবাইল নাম্বার চাওয়া হয়। আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইন হলে এই মোবাইল নাম্বারে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। আইডি কার্ড সংশোধেন কিংবা রিইস্যু আবেদনের অবস্থা সম্পর্কিত সকল SMS এখানে পাঠানো হবে।
Bangladesh NID Application System সাইটে প্রবেশ করার সময় আপনার প্রদত্ত নাম্বারে OTP কোড পাঠিয়ে থাকে। যা যাচাই করার মাধ্যমে NID Service সাইটে লগইন করতে হয়। তাই নাম্বারটি নিজের দেয়ার চেষ্টা করবেন।
#৫. ইউটিলিটি বিলের কপি
আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা যাচাই করার জন্য বিদ্যুৎ বিলের কাগজ কিংবা গ্যাস বিলের কাগজ জমা দিতে হবে। আপনি যে এলাকায় বা যে ঠিকানায় ভোটার হতে চাচ্ছেন সেখানে বসবাসরত বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বিল কিংবা পানি বিলের কাগজ আবেদনের সাথে যুক্ত করতে হবে।
গ্রাম এলাকা হলে পল্লি বিদ্যুতের বিলের কপি অথবা গ্যাস বিলের কপি হলেও হবে। আর শহরের বাসিন্দা হলে DPDC,DESCO মিটারের কার্ডের স্ক্যান কপি অথবা পোস্টপেইড মিটারের বিলের কাগজ। তাছাড়া পানি অথবা গ্যসের বিলের কাগজ দিয়েও আবেদন করতে পারবেন।
#৬. জমির খাজনা বা কর পরিশোধের রশিদ
আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা আলাদা হলে স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করার জন্য জমির পর্চার ফটোকপি অথবা স্থায়ী ঠিকানার বাসাবাড়ির টেক্স প্রদানের রশিদ জমা দিতে হয়। এটি একটি বাধ্যতামূলক ডকুমেন্ট আবেদন করার সময় অবশ্যই এটি প্রয়োজন হবে।
জমি কিংবা বাড়ির টেক্স বা কর পরিশোধ রশিদ, চৌকিদারি ট্যাক্সের রশিদ আথবা পৌরকর পরিশোধের রশিদ। এই ট্যাক্স রশিদ আবেদনকারীর নিজের নামে হবে বিষয়টি এমন নয়। পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবকের নামে হলেও সমস্যা নেই।
#৭. রক্তের গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট
রক্ত গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট জমা দেয়া অপশনাল। আবেদনের ডকুমেটের সাথে এটি যুক্ত করে দিলে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের পেছনে রক্তের গ্রুপ উল্লেখ থাকবে। আমার মতে এটি প্রত্যেকের জমা দেওয়া উচিত।
#৮. নাগরিক সনদ
নতুন ভোটার আবেদনের সাথে নাগরিক সনদ যুক্ত করা বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির কাছ থেকে নাগরিক সনদ সংগ্রহ করতে হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র শুধুমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকের জন্য। তাই আপনি এদেশের একজন নাগরিক তার একটি সনদ আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
আপনার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি যেমন চেয়ারম্যান, সিটি করপরেশনের মেয়র কিংবা ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে নাগরিক সনদ সংগ্রহ করতে পারেন। প্রত্যয়ন পত্র ঠিক একই ভাবে চেয়ারম্যান, মেয়র অথবা কাউন্সিলরের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
#৯. অঙ্গীকারনামা
ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লেখার প্রয়োজন হয়। নতুন NID Card আবেদন করার জন্য সবার অঙ্গীকারনামা লিখার প্রয়োজন নেই। যারা তুলনামূলক বেশি বয়সে এবং পূর্বে সুযোগ এবং বয়স হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করেনি তারা নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হয়।
যারা দীর্ঘদিন প্রবাসে কর্মরত ছিলেন এবং দেশে এসে নতুন আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করবেন তাদের ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামা প্রযোজ্য। যারা বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক আগেই জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করার জন্য উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করেনি তারা এখন ভোটার নিবন্ধন করার জন্য অবশ্যই অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে।
একজন যাতে দুটি আইডি কার্ড করতে না পারে সে জন্য এই অঙ্গীকার নামায় স্পষ্ট উল্লেখ থাকে যে আবেদনকারী পূর্বে কখনো জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করেনি যদি করে থাকে তাহলে পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে তার কোন আপত্তি থাকবে না।
Id registration